বৈরুত, লেবানন: ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ সামরিক কমান্ডার হায়থাম আলী তাবাতাবাই নিহত হয়েছেন। রোববার, বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দাহিয়ে এলাকার হারেত হরাইক মহল্লায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলা চালানো হয়, যেখানে তাবাতাবাইসহ আরও চারজন নিহত হয়েছেন। এই হামলায় ২৮ জন আহত হয়েছেন। খবরটি প্রকাশ করেছে অনলাইন মিডিয়া আল-জাজিরা।

হামলার প্রেক্ষাপট
হিজবুল্লাহ কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, তাবাতাবাইকে ইসরায়েলি হামলায় হত্যা করা হয়েছে। তবে সংগঠনটি তার পদবী বিস্তারিত উল্লেখ করেনি। তাবাতাবাই ছিলেন হিজবুল্লাহর সশস্ত্র শাখার চিফ অব স্টাফ, এবং গত বছরের নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েলের হাতে নিহত হওয়া সবচেয়ে উচ্চপদস্থ কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু’র দপ্তর জানিয়েছে, হামলাটি তাবাতাবাইকে লক্ষ্য করেই চালানো হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এটি গত বছরের যুদ্ধ শুরুর পর তাবাতাবাইকে হত্যা করার তৃতীয় প্রচেষ্টা।

হিজবুল্লাহর প্রতিক্রিয়া
হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা মাহমুদ ক্বোমাতি বলেছেন, ইসরায়েলের এই হামলা ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। তিনি সতর্ক করেছেন, এই ঘটনার ফলে লেবাননে নতুন করে সংঘাতের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
তাবাতাবাই ১৯৬৮ সালে বৈরুতের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি লেবাননি মায়ের ও ইরানি বাবার সন্তান। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি হিজবুল্লাহতে যোগ দিয়েছিলেন এবং তার জীবন পুরোপুরি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল।

ক্ষয়ক্ষতি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় আশেপাশের ভবন ও গাড়িতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি বার্তা সংস্থা এনএনএ জানিয়েছে, হামলায় দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। আল-জাজিরার সাংবাদিক জেইনা খোদর উল্লেখ করেছেন, লেবাননে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল কিছু সময়ের জন্য হামলা বিরতি দিয়েছিল, কিন্তু এখন আবার সক্রিয় হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হিজবুল্লাহ এখনই পূর্ণমাত্রার প্রতিহিংসা শুরু করতে চাইবে না, কারণ এতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী হতে পারে। তবে লেবাননের জন্য এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসরায়েলের হামলা বন্ধে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশ্লেষণ
নিরাপত্তা বিশ্লেষক আলি রিজক বলেছেন, হিজবুল্লাহ এখনই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বড় ধরনের যুদ্ধের সুযোগ নেবে না। তবে, তাবাতাবাই হত্যার ফলে সংগঠনকে কৌশলগত প্রতিক্রিয়া নিতে বাধ্য হতে পারে।