1. smmarufbillah@yahoo.com : admin : Maruf Billah
  2. shamim.unisa@gmail.com : Shamim Hossain : Shamim Hossain

দেশে তৈরি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্কছাড়/ বড় ঝুঁকিতে ইলেক্ট্র্রনিক্স শিল্পখাত

  • পোস্টিং সময় : শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৫
  • ২৩ Time View

দেশে ইতিমধ্যেই তৈরি হয় ফ্রিজ ও এসি’র এমন যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ছাড় দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে দেশে এসব যন্ত্রাংশ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে আরোপ করা হয়েছে উচ্চ শুল্ক হার। এতে দেশের ইলেক্ট্র্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পখাত পড়েছে বড় ঝুঁকিতে। অন্ধকার দেখছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা। তারা বলছেন, এ সিদ্ধান্তে দেশে ইলেক্ট্র্রনিক্স পণ্য ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনের চেয়ে আমদানি লাভজনক হয়ে উঠেছে। ফলে স্থানীয় শিল্পায়ন ব্যাহত হচ্ছে, কর্মসংস্থান হারাচ্ছে বিপুল জনগোষ্ঠী। সংশ্লিষ্টদের মতে, এরূপ সিদ্ধান্তের ফলে ইলেক্ট্রনিক্স খাতে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি থমকে যাচ্ছে। উৎপাদন শিল্পের আড়ালে আমদানির্ভর সংযোজন শিল্প বিকাশের পথ সুগম হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৪শে জুন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন (এসআরও নং-২৭৪-আইন/২০২৫/৩১৭-মূসক) জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এয়ারকন্ডিশনার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এমন বেশ কিছু প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা বাংলাদেশেই বহু বছর আগে থেকেই উৎপাদিত হয়ে আসছে। পক্ষান্তরে এসব যন্ত্রাংশ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে বিনিয়োগকারীদের উচ্চ শুল্ক দিতে হচ্ছে, যা স্থানীয় বৃহৎ ইলেক্ট্রনিক্স শিল্পখাতের জন্য হুমকিস্বরূপ। স্থানীয় শিল্পের পরিপন্থি এমন সিদ্ধান্তে হতবাক বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তারা। তারা জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে স্থানীয় ইলেক্ট্রনিক্স উৎপাদন শিল্পে দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের বিদ্যমান কয়েক হাজার কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগই শুধু নয়, লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বাধাগ্রস্ত হয়েছে সম্পূর্ণ উৎপাদনমুখী দেশীয় ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য শিল্পখাতের টেকসই বিকাশ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ফ্রিজ-এসি উৎপাদন খাতে উল্টো পথে হাঁটছে সরকার। জানা গেছে, প্রজ্ঞাপনের আওতায় দেশীয় রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদন শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের তালিকায় বর্তমানে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে এমন বেশ কয়েকটি যন্ত্রাংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- রেফ্রিজারেটর/ফ্রিজার শেলফ, স্টপার ব্লক, ডিওডোরেন্ট ব্লক, পিপি বটম প্লেট, ক্রিস্পার কভার, ড্রেনেজ পাইপ কভার, কভার অব কম্প্রেসর হাউজ, সাপোর্ট অব ক্রিস্পার কভার, কটন প্যাড ফর শেলফ, পিপি বেল্ট এবং ডাম্পিং ব্লক। এ ছাড়া লাইট হোল্ডার যন্ত্রাংশ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ফ্রিজের পাশাপাশি দেশীয় এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন শিল্পের ক্ষেত্রেও বেশ কয়েকটি উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রেও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ফ্যান ব্লোয়ার, কানেকটিং পাইপ, এক্সিয়াল ফ্যান, ক্যাসিং ফর ইনডোর, এয়ার গাইড প্লেট, টিউব প্লেট, এয়ার ফিল্টার, আইডিইউ প্যানেল, ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ এবং ক্রস ফ্লো ফ্যান। নতুন এসআরও অনুযায়ী, ফ্রিজে ব্যবহৃত হয় এমন তৈরিকৃত (সেমি ফিনিশড) যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে আমদানি করা গেলেও একই যন্ত্রাংশ দেশে তৈরির জন্য কাঁচামাল আমদানিতে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হচ্ছে। আর এসির ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে আমদানিকারক-সংযোজনকারী এবং উৎপাদনকারীদের মধ্যে পলিসিগত সামঞ্জস্য থাকছে না। উৎপাদনকারীর বিপুল বিনিয়োগ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হারাচ্ছে।

এসআরও সুবিধা পাওয়ার জন্য যেসব মেশিনারিজ থাকতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব মেশিনারিজ দিয়ে যেসব যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়, সেগুলোর শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে। এখন যেসব উৎপাদনকারী ইতিমধ্যেই বিপুল বিনিয়োগ করে উক্ত মেশিনারিজগুলো স্থাপন করেছেন, তাদের সেসব মেশিনারিজ কোনো কাজেই লাগছে না। কারণ উক্ত মেশিনারিজ ব্যবহার করে যেসব যন্ত্রাংশ তৈরি করা হচ্ছে, সেসব যন্ত্রাংশের মূল্য আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। ফলে আমদানিকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া এই শিল্পখাতে নতুন কোনো বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং মূল্য সংযোজন হচ্ছে না। কারণ একজন উৎপাদনকারীকে তিন ধাপে বিনিয়োগ করে (মেশিনারিজ ক্রয় ও স্থাপন, লোকবল নিয়োগ এবং উচ্চ শুল্কে কাঁচামাল আমদানি) যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হচ্ছে। পক্ষান্তরে এসআরও সুবিধায় কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই বিনা শুল্কে এসব যন্ত্রাংশ আমদানি করা যাচ্ছে, যা অধিক লাভজনক হওয়ায় দেশ উৎপাদনমুখী শিল্পের পরিবর্তে সংযোজনমুখী শিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, এসআরও-২৭৪ এর ফলে সেমি ফিনিশড গুডস (এসএফজি) এবং প্লাস্টিক শিল্পে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ইলেক্ট্রনিক্স শিল্পে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পার্টসের একটি বিশাল অংশের জোগান আসে এই দুটি খাত থেকে। বর্তমানে দেশে সেমি ফিনিশড গুডস প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৯,৫০০ কোটি টাকা। আর এ খাতে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। এখানে কর্মসংস্থান প্রায় ৭ হাজার মানুষের। আর প্লাস্টিক শিল্পখাতে দেশে মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রায় ৬,০০০ কারখানা রয়েছে, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৫ লাখের অধিক মানুষের। দেশের জিডিপি’র প্রায় ১ শতাংশ এই শিল্পনির্ভর। এসআরও-২৭৪ এর ফলে এই খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে এই খাত বিপুল কর্মসংস্থান হারাচ্ছে, দেশের শিল্পায়ন ব্যাহত হচ্ছে।

তাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ফ্রিজ ও এসি’র যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে, সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি এনবিআরের গুরুত্বসহকারে পুনর্বিবেচনা করে তা বাতিল করা উচিত বলে অভিমত জানিয়েছেন শিল্পখাতে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্টরা।

সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন
Copyrights© 2025 BDSkyNews. All rights reserved.
Site Customized By NewsTech.Com