আন্তর্জাতিক মহল যখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে হাঁটছে, তখন একটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে; কে স্বাধীন ফিলিস্তিনের নেতৃত্ব দেবে?
যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশগুলোও ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এই আলোচনা আরও গতি পেয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের অস্তিত্ব, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড এবং কার্যকর সরকার আছে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
ফিলিস্তিনি কূটনীতিক হুসাম জোমলোট সম্প্রতি লন্ডন থেকে সতর্ক করে বলেছিলেন, জাতিসংঘে আপনারা যা দেখতে চলেছেন, তা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের সম্ভবত শেষ চেষ্টা। তাঁর এই কথা সত্যি প্রমাণ করে, ১৫৩টি দেশের তালিকায় যুক্ত হলো যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এই পদক্ষেপকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরানোর একটি উপায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১৯৩৩ সালের মন্টেভিডিও কনভেনশন অনুযায়ী, একটি রাষ্ট্রের জন্য চারটি মূল মানদণ্ড প্রয়োজন: ১. স্থায়ী জনসংখ্যা, ফিলিস্তিনের এটি আছে। ২. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতা ৩. নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, এটিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। ১৯৪৮ সাল থেকে গাজা এবং পশ্চিম তীর ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন। উপরন্তু, ইসরায়েলি বসতি স্থাপন পশ্চিম তীরকে ক্রমাগত খণ্ডিত করেছে। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনিরা তাদের রাজধানী মনে করলেও বর্তমানে এটিও বিচ্ছিন্ন। ৪. একটি কার্যকর সরকার; এই মানদণ্ডটিই ফিলিস্তিনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সৃষ্টি হলেও ২০০৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনিরা দুটি ভিন্ন সরকারের অধীনে বিভক্ত। গাজায় শাসন করছে হামাস, আর পশ্চিম তীরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতা মাহমুদ আব্বাস।
মাহমুদ আব্বাসের বয়স এখন ৯০-এর কাছাকাছি। তার নেতৃত্ব নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অসন্তোষ প্রবল। তাদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৬ সালে। এর ফলে ৩৬ বছরের কম বয়সী কোনো ফিলিস্তিনি ভোট দিতে পারেনি। ফিলিস্তিনি আইনজীবী ডায়ানা বুট্টু বলেন, আমাদের নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন।
বন্দি থাকা অবস্থায়ও ফিলিস্তিনিদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন মারওয়ান বারঘৌতি। ২০০২ সাল থেকে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা এই নেতাকে সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দুর্বল ও অসুস্থ দেখা গেছে। কিন্তু পশ্চিম তীরের একটি জরিপ বলছে, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি তাকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে চান।
তবে ইসরায়েল, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ঘোর বিরোধী। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, গাজায় হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ; কারও কোনো ভূমিকা থাকবে না। নেতানিয়াহু সরকারের এক মন্ত্রী বলেছেন, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বলে কিছু নেই, তাই কাউকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী পদক্ষেপ হতে পারে কিন্তু এটি কি আদৌ কোনো পরিবর্তন আনবে? ফিলিস্তিনিদের কাছে এখনকার সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে যুদ্ধ বন্ধ করা। ডায়ানা বুট্টুর কথায়, রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বদলে আমরা চাই, এসব দেশ যেন আরও হত্যাকাণ্ড বন্ধে কিছু করে।
আন্তর্জাতিক মহল এখন সেই কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি: ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হলো কিন্তু এর ভবিষ্যৎ নেতা কে হবেন? আর কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের ওপর এই রাষ্ট্র গঠিত হবে?
সূত্র: বিবিসি
Leave a Reply