তারিখ ছাড়া নির্বাচনের আর কিছুই বাকি নেই। সবই প্রায় চূড়ান্ত। এরপরও যথাসময়ে নির্বাচন হবে কিনা এ নিয়ে সংশয়, শঙ্কা। যেকোনো আড্ডায় বসুন একই আলাপ- নির্বাচন হবে তো? হাটে-ঘাটে একই প্রশ্ন। এমন কি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কেন এই পরিস্থিতি? সহজ কোনো জবাব নেই। বেলা শেষে রাজনীতিকদের মধ্যকার অনৈক্যের কথাই বলছেন সবাই। জুলাই অভ্যুত্থানের সুবিধাভোগী রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে ঘায়েল করতে গিয়ে পরিস্থিতিকে নাজুক করে ফেলেছেন। এতটাই অবিশ্বাস তাদের মধ্যে যা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। ক্ষমতার নেশায় পেয়ে বসেছে তাদেরকে।
জুলাই সনদ নিয়ে সমঝোতা হলেও ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে তা পর্দার আড়ালের খেলায় ফাইলবন্দি হয়ে গেছে। জট খুলতে প্রধান উপদেষ্টা রাজনীতিকদের কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছেন। যা কাম্য ছিল না। বেশির ভাগ দল যখন নোট অব ডিসেন্টসহ সমাধান দিয়েছে সেখানে অন্য এক পক্ষকে খুশি করতে গিয়ে গোটা বিষয়টিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। এর ফলে মূল উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবং তাই স্বাভাবিক। সমালোচকরা অবশ্য বলছেন এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। এখানেও স্বার্থ। অভ্যুত্থানের নেপথ্য কারিগরদের স্বার্থ না দেখে কি আর সিদ্ধান্ত হবে? এ কারণেই নাকি জট তৈরি করা হয়েছে। নয় মাস আলোচনার পর আর কি আলোচনা করবেন রাজনীতিকরা। তাদের কাছে তো আর কিছু নেই। অবশ্য একটি শক্তি চাচ্ছে যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে। তারা এখনই ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে। তাই তাদের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন মুখ্য নয়।
বলাবলি আছে এ কারণেই তারা নির্বাচন নিয়ে খেলা করছে। সরকার সাতদিন সময় বেঁধে দিয়েছিল। পাঁচদিনের মাথায় একটি রাজনৈতিক দলের তরফে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবে কি কাজ হবে? বরং কারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাচ্ছে তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বিগত ৫৪ বছরে যে দলটি ক্ষমতার কাছাকাছি যাবার চিন্তাও করতে পারেনি এবার তারা নিজেদেরকে নিয়ে এমনটাই ভাবছে। যদিও বাস্তব অবস্থা তা নয়। জরিপ রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশের কোনো শহরে জয়ের সম্ভাবনা নেই এই দলটির। তবে এটা ঠিক তাদের কব্জায় চলে গেছে প্রশাসন। গ্রামে-গঞ্জে সদস্য সংগ্রহের নামে টাকার বান্ডিল ঢুকে পড়ছে। এত টাকা এলো কোথা থেকে!
রাজনীতিকদের অনৈক্য নতুন সংকটের জন্ম দিতে পারে। দেশটি চলে যেতে পারে ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাফেলায়। নভেম্বর জুড়েই অস্বস্তি থাকতে পারে। বড় কোনো সংকট তৈরির সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না। পতিত স্বৈরাচারের বিচারের রায় নিয়ে দেশে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যার লক্ষণ স্পষ্ট। ঢাকা শহরে এর বেশ কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি নাজুক বিদেশিরাও এটা বলতে শুরু করেছেন।
আন্তর্জাতিক রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট সরাসরি তা বলে দিয়েছে। আট দফা সুপারিশও দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম নয় টকশোতে সবাই একবাক্যে বলছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামে যা ঘটে গেল তা দেখে অনেকেই আতঙ্কিত। নির্বাচন না হলে যাদের লাভ তারা খেলছে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে।
প্রফেসর ইউনূস নির্বাচনের ব্যাপারে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। কিন্তু তার উপদেষ্টারা এখনো ঘুমিয়ে আছেন। দু’একজন কথা বললেও বাকিরা নির্বাচন নিয়ে মোটেই আগ্রহী নয়। একটি শব্দও বলেননি এমন উপদেষ্টার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এর ফলে মানুষের কাছে আস্থা তৈরি হচ্ছে না। মানুষ এখনো অন্ধকারে।
রাজনীতিকরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে। তারা এলাকায় যাচ্ছেন বটে। কিন্তু কোনো কমিটমেন্টে যাচ্ছেন না। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে রাজনীতির ছক তৈরি হচ্ছে অন্য কোথাও। নভেম্বর মাসে যদি নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হয় তাহলে বুঝতে হবে আমরা অন্য পথে হাঁটতে শুরু করছি। যে পথ গণতন্ত্রের নয়, ষড়যন্ত্রের। কেউ কেউ অবশ্য বলেন বন্দর আর করিডোর প্রশ্নে সিদ্ধান্ত না হলে নাকি নির্বাচন অনিশ্চিত থেকে যাবে। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল নাকি কথা দিয়ে ফেলেছে। দেশের স্বার্থ এভাবেই বিকিয়ে দেয়া হয়। এটাই কি বাংলাদেশি রাজনীতির নিয়তি। যত খেলা আর ষড়যন্ত্রই হোক না কেন নির্বাচন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
Leave a Reply